Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

উপজেলা প্রশাসনের পটভূমি

আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা গোপালগঞ্জ জেলার একটি বৃহত্তম  উপজেলা। জানা যায় যে, গোপালগঞ্জ প্রাচীন এবং অতীত নাম ছিল রাজগঞ্জ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপুর্ণ উত্তাল তটনী মধুমতি’র তীর ছুঁয়ে তখনকার রাজগঞ্জ ছিল মধুমতি’র নদীর একটি পারঘাটা। খেয়া পারাপারের জন্য মানুষ এসে জড়ো হতো এখানে। এ ভাবে পারঘাটকে কেন্দ্র করে একটা ছোট বাজার গড়ে উঠে। আর দিনে দিনে তা হয়ে উঠে গঞ্জ। নাম হয় রাজগঞ্জ। সেকালে মধুমতি নদী ছিল খুব প্রমত্ত। বসতি বলতে ছিল নিম্নবর্ণের জেলে, মাঝি, বেদে আর কুমোর। প্রায় সবাই নম:শুদ্র হিন্দু। দেড়শ বছর আগে এখানে একঘর মুসলমানের বসতির কোন সন্ধান পাওয়া যায় না।

 


 

আবার কেউ কেউ বলেন রাণী রাসমনির নায়েব ছিলেন শ্রী রজনী ঘোষ। উক্ত নায়েব এ এলাকায় জমিতদানীন্তন কালে এতদাঞ্চলটি মকিমপুর স্টেটের জমিদার রাণী রাসমনির এলাকাধীন ছিল। উল্লেখ্য যে রাণী রাসমনি একজন জেলের মেয়ে ছিলেন। সিপাই মিউনিটির সময় তিনি একজন উচ্চ পদস্থ ইংরেজ সাহেবের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন। পরবর্তীতে তারই পুরষ্কার হিসাবে বৃটিশ সরকার রাসমনিকে মকিমপুর স্টেটের জমিদারী প্রদান করেন এবং তাঁকে রাণী উপাধিতে ভুষিত করেন। রাণী রাসমনি কলকাতার কর্পোরেশন ষ্টীটে বসবাস করতেন। মাঝে মাঝে জমিদারী দেখাশুনার জন্য রাণী আসতেন তার জমিদারী এলাকায়। কলকাতা থেকে এখানে আসতে হতো পানসী বা বজরা নৌকায় করে। একবার রাসমনি তার আদরের নাতি গোপালকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। কলকাতা শহরে বড় হয়েছে গোপাল। বিল বাওড় নদী বিমুগ্ধ দৃশ্যের সাথে তার পরিচয় নেই। রাজগঞ্জ ঘাটে পানসী থেকে নেমে গোপাল যে দিকে তাকায় সেদিকেই অন্তহীন  প্রকৃতি। বিলে ঝিলে শাপলা শালুকের মেলা দেখে আনন্দে আত্তহারা হয়ে পড়ে সে। রাজগঞ্জ এলাকাটাকে খুব ভাল লাগে গোপালের। রাণী রাসমনি তার প্রিয় নাতির ভালবাসার জায়গাটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য রাজগঞ্জের রাজ শব্দটির স্থলে গোপালের নাম যুক্ত করে এলাকার নাম রাখেন গোপালগঞ্জ।

দারী তদারকী করতেন। নব গোপাল নামে তার এক নাতি ছিল। রজনী ঘোষ তার এই নাদুস নুদস চেহারার নাতিটিকে খুব ভালবাসতেন। ভালবাসার নিদর্শন স্বরুপ তিনি নব গোপাল এর "গোপাল’’ অংশটি প্রথমে রেখে তার সাথে রাজগঞ্জের ’’গঞ্জ’’ যোগ করে জায়গার নামকরণ করেন গোপালগঞ্জ। নব গোপালের নামে যে গোপালগঞ্জের নাম হয়েছে এটাকেই গোপালগঞ্জবাসী সমর্থন করেন।

 

অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে গোপালগঞ্জ এলাকা ফরিদপুর জেলায় মাদারীপুর মহকুমা ও থানাধীন ছিল। ঐ সময়ে মাদারীপুরের সাথে এ এলাকায় জলপথ ছাড়া কোন স্থল পথের সংযোগ ছিল না। কোন স্টীমার বা লঞ্চ চলাচলও ছিল না। কেবলমাত্র বাচাড়িনৌকা, পানসি নৌকা, টাবুরিয়া নৌকা, গয়না নৌকা, ইত্যাদি ছিল চলাচলের একমাত্র বাহন। যাতায়াতের অসুবিধার কারণে ঐ এলাকায় পুলিশ প্রশাসন ছিল খুবই দুর্বল। মামলায় আসামীরা গ্রেফতারের ভয়ে দুর্গম বিল অঞ্চলে  আত্তগোপন করে থাকত। এ সমস্ত অসুবিধার দরুণ ১৮৭০ সালে গোপালগঞ্জ থানা স্থাপিত হয়। ১৮৯৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এর সীমানা নির্ধারিত হয়। ক্রমান্বয়ে এ অঞ্চলের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি উন্নতি হতে থাকে। বর্তমানে যেখানে থানা অবস্থিত ঐ স্থানে একটি টিনের ঘরে থানা অফিসের কাজকর্ম চালু করা হয়।

 

১৯০৯ সালে কাশিয়ানী, মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ সদর ও কোটালীপাড়া থানা নিয়ে গোপালগঞ্জ মহকুমা স্থাপিত হয়। মিশন স্কুলের দক্ষিণ পার্শ্বে দেওয়ানী আদালত ও সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের স্থান নির্দিষ্ট হয়। তার দক্ষিণে মোক্তার লাইব্রেরীসহ ফৌজদারী আদালত ভবন ও সংশ্লিষ্ট অফিসের জন্য নির্ধারিত হয়। বর্তমানে যেখানে ডিসি অফিস সেখানে বিরাটকায় চারচালা গোলপাতার ঘর বাঁশের বেড়া দিয়ে ফৌজদারী কোর্ট ও সংশ্লিষ্ট অফিসের জন্য নির্মিত হয়। তার দক্ষিণে বর্তমান জেলখানার স্থানে একটি বিরাটকায় গোলের ঘর তুলে মজবুত বাঁশের বেড়া অস্থায়ী জেলখানা নির্মিত হয়। বর্তমানে যেখানে মোক্তার বার ভবন ঐ স্থানে একটি ছনের ঘরে মোক্তারগণ আইন ব্যবসা শুরু করেন। ঐ সময়ে কোন উকিল এখানে আইন ব্যবসা করতে আসেনি। গোপালগঞ্জের প্রথম মহকুমা প্রশাসক ছিলেন মি: সুরেশ চন্দ্র সেন।

১৯৭২ সালের ২০ জা্নুয়ারী গোপালগঞ্জ পৌরসভা  গঠিত হয়। পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন জনাব মোহাম্মদ আলী খান (আবু মিয়া)। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে গোপালগঞ্জ সদর থানা উপজেলায় উন্নীত হয়। প্রথম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছিলেন জনাব এইচ নুর মোহাম্মদ। সদর উপজেলার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন জনাব ধীরেন্দ্র কুমার বাকচী। ১৯৮৪ সালের ১  ফেব্রুয়ারী গোপালগঞ্জ জেলা হিসেবে মর্যাদা লাভ করে।